হোম / বিস্তারিত...
Line
bzck page_right
 
Bangladesh Map
পূর্ন পৃষ্ঠায় দেখুন
প্রায় ১৫.৫০ কোটি জনসংখ্যা নিয়ে বাংলাদেশ বর্তমানে এশিয়ার মধ্যে পঞ্চম এবং বিশ্বে অষ্টম জনবহুল দেশ। প্রথম পঞ্চ বার্ষিকী পরিকল্পনাকালে (১৯৭৩-৭৮) জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ৩% যা বর্তমানে (বিপিএন্ডএইচসি-২০১১) ১.৩৭% এ নেমে এসেছে। জনমিতিক হিসাব থেকে ধারণা করা হচ্ছে বর্তমান ধারা চলমান থাকলে এই শতাব্দীর মাঝামাঝি জনসংখ্যা আরো ৪০% বেড়ে ২২ কোটি ২০ লক্ষে পৌঁছাতে পারে এবং তার কয়েক দশক পরে জনসংখ্যা স্থির হবে। মোট জনগোষ্ঠীর ৭১.৯% (বিশ্ব ব্যাংক প্রতিবেদন-২০১২) বর্তমানে গ্রামে বাস করে যা ২০২৫ সালের দিকে গিয়ে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী ১৪ কোটিতে পৌঁছাবে এবং স্থির হয়ে যাবে। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর এই স্থিরতা আসবে মূলত গ্রাম থেকে শহরে অভিবাসনের কারণে। ফলে নগরে জনসংখ্যা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। নগরের জনগোষ্ঠীর এক-তৃতীয়াংশ বস্তিবাসী। বস্তি এলাকায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার (৬%), যা নগরের সামগ্রিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের (২.৮৫) দ্বিগুণেরও বেশি। যার অর্থ হল অদূর ভবিষ্যতে বস্তি এলাকা নাগরিক জনগোষ্ঠীর বৃহৎ অংশ দখল করে ফেলবে।

১৯৯৪ সালে কায়রোতে অনুষ্ঠিত জনসংখ্যা ও উন্নয়ন বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে আইসিপিডি নীতিমালা ৮-এ উল্লেখ করা হয়েছে ‘প্রত্যেক দম্পতিরই স্বাধীনভাবে ও দায়িত্বশীলতার সাথে সন্তানসংখ্যা নির্ধারণ ও দু’সন্তানের মাঝে বিরতি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়া এবং এজন্য প্রয়োজনীয় তথ্য, শিক্ষা ও তার উপায় লাভের মৌলিক অধিকার রয়েছে’। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গৃহীত এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশেই জাতীয় নীতিমালা প্রণয়ন এবং এ আলোকে বাস্তব কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

স্বাক্ষরতার নিম্নহার, নারীর যথাযথ মর্যাদার অভাব ও মাথাপিছু কম আয়, ইত্যাদি প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও বাংলাদেশে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমে যথেষ্ট সফলতা রয়েছে। এই সফলতার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল অতীতের উচ্চ জন্মহার হ্রাস এবং একই সাথে দ্রুত মৃত্যুহার কমিয়ে আনা যা এদেশের জনসংখ্যায় একটি অদ্ভুত গতিধারা প্রদান করেছে। এর ফলে প্রজনন বয়সে প্রবেশের উপযোগী একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর ধারা অব্যাহত রয়েছে যা’ আরো কয়েক দশক জনসংখ্যা গতিধারা (Population Momentum) উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে। ফলে দারিদ্রের অন্যতম কারণ এবং উন্নয়নের প্রতিবন্ধক হিসেবে জনসংখ্যা এখনও অন্যতম নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। সরকার অনুধাবন করতে পেরেছেন যে, বৃহৎ জনগোষ্ঠী অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে অন্যতম বাধা। তাই সরকার জাতীয় জনসংখ্যা নীতি প্রণয়ন করেছেন যার অন্যতম লক্ষ্য হল ২০১৫ সালের মধ্যে প্রতিস্থাপনযোগ্য জনউর্বরতা অর্জন করা। এটা অর্জন করতে হলে দম্পতি প্রতি জনউর্বরতা আরো ০.৩ শতাংশ কমাতে হবে। প্রতিস্থাপনযোগ্য জনউর্বরতায় পৌঁছানোর পরও প্রতিবছর ১৬-২০ লক্ষ জনসংখ্যা যোগ হতে থাকবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাংখিত ফল পেতে হলে প্রক্ষেপিত জনউর্বরতা ২ এর অনেক কমে তথা ১.৭ নিয়ে যেতে হবে বলে অনেক জনসংখ্যা বিশারদ মনে করেন। স্থির জনসংখ্যা অর্জনের পর জনউর্বরতায় পরিবর্তন না আসলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির আর কোন হেরফের হবে না।

২০১৫ সালের মধ্যে প্রতিস্থাপনযোগ্য জনউর্বরতা অর্জন সরকারের প্রাধিকার লক্ষ্যমাত্রায় অন্যতম। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে দম্পতি পিছু মোট প্রজননহার ২.৩ হতে নামিয়ে ২.০ বা ২.১ এ নিয়ে আসতে হবে। ফলে ২০৫০ সালের মধ্যে এন আর আর ( NRR ) ১ অর্জিত হবে। এ লক্ষ্যে CPR ৬১.২% (২০১১) হতে ২০১৬ সালের মাঝামাঝি ৭২% উন্নীত করতে হবে।

বাল্যবিবাহ এবং কিশোরী মাতৃত্ব বাংলাদেশের জন্য অতি প্রচলিত একটি বিষয়। প্রতি ৩ জনে ১ জন মেয়ে আইন সম্মত বিয়ের বয়সে (মেয়েদের জন্য ১৮ বছর) পৌঁছার আগে বিয়ে হয় এবং তাদের মধ্যে প্রতি ৩ জনের ১ জন ১৯ বছর বয়সের আগে গর্ভধারণ করে (বিডিএইচএস-২০১১)। তাছাড়া ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী যুবা মেয়েদের ২৭ শতাংশ মাতৃত্ব লাভ করেন এবং আরো ৬ শতাংশ প্রথম বারের মত গর্ভবতী হন। এইচপিএসপি (HPSP), এইচপিএনএসপি (HPNSP), এইচপিএনএসডিপি (HPNSDP) সহ অন্যান্য জাতীয় নীতি ও কার্যক্রম বাস্তবায়নে দৃঢ় অঙ্গীকার, আইইসি / বিসিসি কার্যক্রমের কার্যকর বাস্তবায়ন, সিএসবিএ (CSBA) প্রশিক্ষণ, পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমের উল্লেখযোগ্য বিস্তৃতি, নিরাপদ এমআর (MR) সেবা প্রদান, মাতৃত্বকালীন ভাউচার স্কীম বাস্তবায়ন, বেসরকারী সেবা ক্ষেত্রের সম্প্রসারণ ও উপূর্যপরি নারীশিক্ষার বিস্তৃতির কারণে উপরোক্ত সীমাবদ্ধতার মধ্যেও বাংলাদেশে মাতৃ-শিশু ও নবজাতকের মৃত্যু উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।

সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিশেষত লক্ষ্যমাত্রা ৪ ও ৫ অর্জনে বাংলাদেশ সঠিক পথেই এগুচ্ছে। তবে প্রতি হাজার জীবিত জন্মে নবজাতকের মৃত্যুহার ৩২ (বিডিএইচএস-২০১১) যা’ উন্নত দেশের তুলনায় যথেষ্ট বেশি। এ সূচকটির সন্তোষজনক হ্রাস এখনও পরিলক্ষিত হচ্ছে না অথচ শিশুমৃত্যু বিবেচনার ক্ষেত্রে সূচকটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ। ২০০৪, ২০০৭ ও ২০১১ সালে পরিচালিত বিডিএইচএস জরিপ এবং ২০১০ সালে পরিচালিত বি এম এম এস জরিপের ফলাফল থেকে জানা যায়, ২০০৫ সালে দক্ষ সেবাদানকারী হতে গর্ভবতী বা এএনসি (ANC) সেবা গ্রহণকারী ছিল ৪৬.২ শতাংশ যা বেড়ে ২০১০ সালে হয়েছে ৫৬.৪ শতাংশ, দক্ষ সেবাদানকারীর মাধ্যমে প্রসব, কিশোরী মাতৃত্ব এবং প্রসব পরবর্তী সেবা এখন পর্যন্ত জ্বলন্ত ইস্যু হিসেবে রয়ে গেছে। যদিও ৫৬.৪ শতাংশ (বিএমএমএস-২০১০) দক্ষ সেবাদানকারীর নিকট হতে এএনসি সেবা গ্রহণ করেছেন, তন্মধ্যে মাত ২৬.৪ শতাংশ আকাঙ্খিত মাত্রায় (চার বা ততোধিক বার) এই সেবা গ্রহণ করেছেন। দক্ষ জনবলের তীব্র সংকট বিশেষত ধাত্রী, সেবিকা ও চিকিৎসক সংকটের কারণে নগর ও গ্রামে এই সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে ভিন্নতা দেখা যায় (নগরে ৫৩.৭%, গ্রামে ২৫.২%)। মোট প্রজননহার, মাতৃমৃত্যুহার, নবজাতকের মৃত্যুহার ও শিশু মৃত্যু - হার হ্রাসের মাধ্যমে উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের নিমিত্ত পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগি ও বেসরকারী সংস্থার সহযোগিতায় কৌশলগত ও লক্ষ্যভিত্তিক সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। যা এইচপিএনএসডিপি (HPNSDP) এর সেক্টর ভিত্তিক কার্যক্রমে প্রতিফলিত হয়েছে।

সরকারের ওয়েব পোর্টাল এর সাথে সংযুক্তির মাধ্যমে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট (www.dgfpbd.org) পরিবার পরিকল্পনা, মাও শিশু স্বাস্থ্য বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য সমূহ আদান-প্রদান করছে। জনসংখ্যা বিশারদ, গবেষক, তাত্ত্বিক, ছাত্র, নীতি নির্ধারক ও গণমাধ্যম ব্যাক্তিরা এ সকল তথ্য বিশ্লেষণ করে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমে কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করতে পারে। সাথে সাথে “প্রতিটি গর্ভই হোক কাঙ্খিত এবং নিরাপদ” এই বিষয়টিও নিশ্চিত করা যায়।
 
 
 
Line