ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
G L
Page_right

বাংলাদেশের জনসংখ্যা ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমের ঐতিহাসিক পটভূমি

বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি ছোট্ট দেশ। এর আয়তন ১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটার। বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬৫০ খ্রিষ্টাব্দে ছিল ১ কোটি এবং তা ২০০ বছর পর ১৮৫০ খ্রিষ্টাব্দে বৃদ্ধি পেয়ে দ্বিগুণ অর্থাৎ ২কোটি হয়। এই ২ কোটি জনসংখ্যা ৪ কোটি ১৯ লাখ হয় ৯১ বছরে। বাংলাদেশের পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম দীর্ঘ প্রায় চার দশকের প্রচেষ্টায় আজ অনেক সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে। ১৮৫১ সালে এই ভূখন্ডে ২ কোটি ৩ লাখ লোকের বসবাস ছিল। ৯০ বছর পর ১৯৪১ সালে এই জনসংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয় (৪ কোটি ১৯ লাখ)। মাত্র ৩৩ বছর পর ১৯৭৪ সালে এই জনসংখ্যা আবারও প্রায় দ্বিগুণ হয় (৭ কোটি ৬৪ লাখ)। বর্তমানে জনসংখ্যা প্রায় ১৫ কোটি ২৫ লাখ (আদমশুমারি-২০১১)। প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১০১৫ জন লোক বাস করছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার শতকরা ১.৩৭ (আদমশুমারি-২০১১)। বর্তমান হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আগামী ৫০ বছরে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ধারন ক্ষমতার বাহিরে চলে যাবে।

বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির চিত্র :
সাল জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার
১৬৫০ ১ কোটি ---
১৮৫০ ২ কোটি ---
১৯০১ ২ কোটি ৮৯ লাখ .৮২
১৯৫১ ৪ কোটি ২১ লাখ ২.১৬
১৯৬১ ৫ কোটি ৪৫ লাখ ৩.১৫
১৯৭৪ ৭ কোটি ৬৪ লাখ ৩.০০
১৯৮১ ৮ কোটি ৯৯ লাখ ২.৩২
১৯৯১ ১০ কোটি ৮০ লাখ ২.১৭
২০০১ ১২ কোটি ৯২ লাখ ১.৪৭
২০১১ ১৫ কোটি ২৫ লাখ ১.৩৭

বাংলাদেশের পরিবার পরিকল্পনা এবং মা ও শিশুস্বাস্থ্য কার্যক্রম :
বাংলাদেশ ৭ টি প্রশাসনিক বিভাগ, ৬৪টি জেলা, ৫৯৯টি থানা এবং ৪৪৯৮টি ইউনিয়নে বিভক্ত (বিবিএস- ৩১/১২/২০১১)। প্রতিটি ইউনিয়নে ৯টি হিসাবে মোট ৪০,৪৮২টি ওয়ার্ড রয়েছে। প্রজনন স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা এবং মা ও শিশুস্বাস্থ্য সেবা বিতরণের জন্য ওয়ার্ডগুলোকে ২৩,৫০০টি ইউনিটে বিভক্ত করা হয়েছে। ১৯৫৩ সালের প্রথমদিকে এদেশে বেসরকারি পর্যায়ে সম্পূর্ণ স্বেচ্ছামূলকভাবে পরিবার পরিকল্পনা কর্মকান্ডের সূচনা হয়।তারও একযুগ পর থেকে সরকারিভাবে এদেশে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম শুরু হয়। কার্যক্রমের শুরুতেই ছিল নানা প্রতিবন্ধকতা। সময়ের প্রবাহে এসব প্রতিবন্ধকতার অধিকাংশই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। সকল পর্যায়ে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাসমূহ কার্যক্রম গ্রহণের ফলে বিভিন্ন জনমিতিক সূচকে আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। এক নজরে -
    প্রথম পর্যায়, (১৯৫৩-৫৯) বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবামূলক পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম:
    ১৯৫৩ সালে কিছু সমাজ সচেতন, প্রগতিশীল ও মানবহিতৈষীর প্রচেষ্টায় জনসংখ্যা কার্যক্রম স্বল্প পরিসরে শুরু হয় এবং ধীরে ধীরে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পরিগ্রহ করে। বেসরকারি উদ্যোগে গঠিত হয় পরিবার পরিকল্পনা সমিতি। পরিবার পরিকল্পনা সমিতি বড় বড় শহরগুলোতে ক্লিনিক স্থাপনের মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করে। জনগণকে অবহিতকরণ এবং সচেতন করার জন্য পরিবার পরিকল্পনা সমিতি ‘সুখী জীবন’ নামে একটি মুখপত্র প্রকাশ করে।

    দ্বিতীয় পর্যায়, (১৯৬০-৬৪) ক্লিনিকভিত্তিক সরকারি পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম:
    এ সময়ে জনসংখ্যা কার্যক্রমকে স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সম্পৃক্ত করা হয়। স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র যেমন- হাসপাতাল, ডিসপেনসারি এবং ক্লিনিকের মাধ্যমে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি বা জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী হিসেবে শুধু কনডম বিতরণ করা হয়। কমপক্ষে ৬-৭% সক্ষম দম্পতির মাঝে পরিবার পরিকল্পনা সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।

    তৃতীয় পর্যায়, (১৯৬৫-৭০) মাঠভিত্তিক স্বায়ত্বশাসিত পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম:
    ১৯৬৫ সালে সরকারি পর্যায়ে জোরালোভাবে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। কেন্দ্রীয় পর্যায়ে পরিবার পরিকল্পনা কাউন্সিল গঠন করা হয়। প্রাদেশিক পর্যায়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে জাতীয় পরিবার পরিকল্পনা বোর্ড এবং জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে জেলা পরিবার পরিকল্পনা বোর্ড গঠিত হয়। প্রাদেশিক পর্যায়ে গঠিত বোর্ডের ওপর সার্বিক কার্যক্রমের দায়িত্ব অর্পিত হয় এবং এ দায়িত্ব একজন পরিচালকের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়। উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য জেলা পর্যায়ে একজন পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবং ক্লিনিক্যাল সেবা কার্যক্রম তত্ত্বাবধানের জন্য একজন জেলা টেকনিক্যাল কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। থানা পর্যায়ে একজন থানা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবং একজন মহিলা ও দু’জন পুরুষসহ মোট ৩ জন সহকারী নিয়োগ করা হয়। থানা পর্যায়ের কার্যক্রম বাস্তবায়নের সার্বিক দায়িত্ব থানা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে দেয়া হয়। ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বেচ্ছাভিত্তিক CMO (Chief Male Organizer) নিয়োগ করা হয়। মহিলা পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা নামে একটি নতুন প্যারামেডিকস ক্যাডার গঠন করা হয় এবং তাঁদেরকে আইইউডি এবং খাবার বড়ির ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের কারণে ১৯৭১ সালে কার্যক্রম প্রায় বন্ধ থাকে।

    চতুর্থ পর্যায়, (১৯৭২-৭৪) অন্তর্বর্তীকালীন সমন্বিত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম:
    যুদ্ধবিদ্ধস্থ দেশ পুনর্গঠণের কাজে ব্যস্ততার কারণে স্বাধীনতা-উত্তর প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন বিলম্বিত হয়। পরিকল্পনা প্রণয়ন প্রক্রিয়াধীন থাকায় তদানীন্তন পাকিস্তান সরকারের সাংগঠনিক অবকাঠামো ও প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ-সুবিধার ভিত্তিতে পরীক্ষামূলক ও অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে আলাদাভাবে পরিচালিত তিনটি Vertical Programme: স্বাস্থ্য, ম্যালেরিয়া নির্মূল ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচিকে একীভূত করে সমন্বিত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি চালু করা হয়। জনসংখ্যা বৃদ্ধির অপরিমিত গতি রোধকল্পে ও ছোট পরিবারের আদর্শকে জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে কর্মসূচিতে জনগণের অংশগ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। এ সময়ে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি হিসেবে খাবার বড়ি প্রবর্তন করা হয়। ১৯৭৪ সালে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে একজন অতিরিক্ত সচিবের দায়িত্বে স্বতন্ত্র পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ গঠন করা হয়।

    পঞ্চম পর্যায়, (১৯৭৫-৭৮) মা ও শিশু স্বাস্থ্যভিত্তিক বহুমুখী পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম:
    ১৯৭৫ সালে উপরাষ্ট্রপতির সভাপতিত্বে গঠিত হয় প্রথম জাতীয় জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ পরিদপ্তর। ১৯৭৫ সালে মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়। ১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও পরিবার পরিকল্পনা পরিদপ্তর সৃষ্টি করা হয়। পুনর্গঠন ও উন্নয়ন কর্মকান্ডের অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধিকে সরকার ১৯৭৬ সালে দেশের এক নম্বর সমস্যা হিসেবে ঘোষণা করে। একই বছর জুন মাসে ’জাতীয় জনসংখ্যা নীতি’র রূপরেখা প্রণীত হয়। রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে জাতীয় জনসংখ্যা পরিষদ পুনর্গঠিত হয়। ১৯৭৬ সালে মন্ত্রণালয়ের নামকরণ করা হয়- স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের দু’টি বিভাগ-’স্বাস্থ্য বিভাগ’ এবং ’জনসংখ্যা ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ’ এর দায়িত্ব পালনের জন্য দুজন উপদেষ্টা নিয়োগ করা হয়। দু’টি বিভাগ পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রণালয়ের মর্যাদা লাভ করে এবং ১৯৭৭ সালের শেষ দিক পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে। ১৯৭৬ সালে ওয়ার্ডভিত্তিক পূর্ণকালীন মাঠকর্মী নিয়োগ করা হয় এবং প্রতি গ্রামে একজন দাইকে নিরাপদ প্রসবের ওপর প্রশিক্ষণ প্রদানের কার্যক্রমের সূচনা হয়। ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র স্থাপনের কাজ হাতে নেয়া হয়। জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান (নিপোর্ট), ১২টি পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং ২১টি আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সৃষ্টি করা হয়।

    ষষ্ঠ পর্যায়, (১৯৭৮-৮০) থানা ও নিম্ন পর্যায়ে সমন্বিত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমের রূপরেখা প্রণয়ন:
    প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মেয়াদান্তে (১৯৭৮-৮০) দু’বছর মেয়াদী Two years approach plan গ্রহণ করা হয়। এর মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল পরবর্তী পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার আওতায় থানা ও নিম্ন পর্যায়ে সমন্বিত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমের রূপরেখা প্রণয়ন করা। এ সময়ে মহাপরিচালক (কর্মসূচি উন্নয়ন) এর একটি নতুন পদ সৃষ্টি এবং পূরণ করা হয়। বিভাগীয় পর্যায়ে পরিচালক, জেলা পর্যায়ে সহকারী পরিচালক (সাধারণ ও আইইএম) ও সহকারী পরিচালক (এমসিএইচ) এবং থানা মেডিক্যাল অফিসারের পদ সৃষ্টি ও পূরণ করা হয়। থানা পর্যায়ে থানা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার নিয়ন্ত্রণাধীনে সমন্বিত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম চালু করা হয়। স্বাস্থ্য বিভাগ এবং জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের দায়িত্ব দু’জন সচিবের স্থলে একজন সচিবের কাছে ন্যস্ত করা হয় এবং তথ্য, শিক্ষা ও উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম জোরদার করা হয়।

    সপ্তম পর্যায়, (১৯৮০-৮৫) সমন্বিত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম:
    থানা ও নিম্ন পর্যায়ে পরিবার পরিকল্পনা এবং মা ও শিশুস্বাস্থ্য সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। মা ও শিশুস্বাস্থ্য সেবা এবং পরিবার পরিকল্পনা সেবা প্রদানের বিষয়টি মেডিক্যাল অফিসারসহ স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের দায়িত্বের অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়। একক নেতৃত্ব (Unified Command) প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ের নাম ’স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়’ নামকরণ করা হয়। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে এক মন্ত্রী ও এক সচিবের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা হয়। সমন্বিত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমের আওতায় থানা ও নিম্ন পর্যায়ে সমন্বিত সেবা প্রদান পদ্ধতি (Coordinated Service Delivery System) চালু করা হয়। মন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি নির্বাহী পৌরসভা ও কমিটি গঠন করা হয়। জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং জনপ্রতিনিধিদের কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে এ সময়ে কিছু উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। জেলা পর্যায়ে জেলা পরিবার পরিকল্পনা কমিটি ও থানা পর্যায়ে থানা পরিষদের নেতৃত্বে গঠিত হয় থানা জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কমিটি। এছাড়া পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে যথাক্রমে পৌরসভা ও ইউনিয়ন জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কমিটি, গ্রাম পর্যায়ে গ্রামীন জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কমিটি এবং প্রতিষ্ঠন পর্যায়ে প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কমিটি গঠন করা হয়।

    অষ্টম পর্যায়, (১৯৮৫-৯০) জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম:
    ইউনিয়ন পর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে গঠন করা হয় ইউনিয়ন জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কমিটি, উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে গঠন করা হয় ‘উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম বাস্তবায়ন কমিটি’। জেলা পর্যায়ে দু’টি কমিটি গঠন করা হয়। জেলার মন্ত্রীর সভাপতিত্বে গঠিত হয় ‘জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম বাস্তবায়ন কমিটি’। সঠিক তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণের জন্য মাঠ পর্যায়ে পরিবার কল্যাণ সহকারী রেজিস্টার (FWA Register) প্রবর্তন করা হয়। মাঠ পর্যায়ে সেবার প্রাপ্যতাকে আরো সহজলভ্য করার লক্ষ্যে স্যাটেলাইট ক্লিনিক কার্যক্রম শুরু করা হয় এবং বহুমুখী পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য জাতীয় পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত জনপ্রতিনিধি, সকল মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব, যুগ্মসচিব এবং সাংসদদের মাঠ পর্যায় পর্যন্ত কার্যক্রম তদারকীতে সম্পৃক্ত করা হয়।

    ’জাতীয় জনসংখ্যা দিবস’ উদ্‌যাপন ও দু’সন্তান বিশিষ্ট আদর্শ দম্পতিদের সংবর্ধনা দেয়ার রীতি প্রচলন করা হয়। ভালো কাজের জন্য মাঠকর্মীদের পুরস্কার দেয়ার নিয়ম প্রবর্তন করা হয়। পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমকে একটি সামাজিক আন্দোলনে রূপ দেয়ার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়। এ সময়ে বাংলাদেশের কার্যক্রম আন্তর্জাতিক জনগোষ্ঠীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং জাতিসংঘ জনসংখ্যা পুরষ্কার লাভ করে।

    নবম পর্যায়, (১৯৯০-৯৫) নিবিড় সেবাদান পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম:
    মাঠ পর্যায়ে সেবাপ্রদান অবকাঠামো বিস্তৃতকরণ অব্যাহত থাকে। মাঠকর্মীদের তথ্য, শিক্ষা ও উদ্বুদ্ধকরণ এবং কাউন্সেলিং দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ব্যাপক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়। মা ও শিশুমৃত্যু রোধে জরুরি প্রসূতি সেবার প্রচলন করা হয়। নিরাপদ মাতৃত্ব বিষয়ক কার্যক্রম জোরদার করা হয়। পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি হিসেবে স্বল্প পরিসরে নরপ্ল্যান্ট পদ্ধতি প্রচলন করা হয়। পরিবার কল্যাণ সহকারীদের মাধ্যমে বাড়িতে ক্লায়েন্টকে ইনজেকশন প্রদানের ব্যবস্থা নেয়া হয়। প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্থায়ী পদ্ধতির সেবা প্রদান কার্যক্রম জোরদার করার লক্ষ্যে অস্থায়ীভাবে স্থায়ী পদ্ধতি সেবা প্রদান কেন্দ্র খোলা হয়। পুরুষদের এবং নবদম্পতিদের পদ্ধতি গ্রহণে উদ্বুদ্ধকরণে বিশেষ জোর দেয়া হয় এবং ক্লিনিক্যাল পদ্ধতি গ্রহণের হার বৃদ্ধি করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হয়।

    দশম পর্যায়, (১৯৯৫-১৯৯৮) পঞ্চম স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা কার্যক্রমের প্রস্তুতিকাল:
    ১৯৯৪ সালে কায়রোতে অনুষ্ঠিত হয় জনসংখ্যা ও উন্নয়ন বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন (ICPD)। উক্ত সম্মেলনে গৃহীত সুপারিশের আলোকে কার্যক্রমকে প্রজনন স্বাস্থ্য পরিচর্যা ভিত্তিক করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এ সময়ে পরবর্তী পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (১৯৯৭-২০০২) মেয়াদের জন্য নতুন আঙ্গিকে কার্যক্রম গ্রহণের পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়।

    একাদশ পর্যায়, (১৯৯৮-২০০৩) স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা সেক্টর কার্যক্রম (Health and Population Sector Programme- HPSP):
    এইচপিএসপি (HPSP)-র লক্ষ্য ছিল দেশের জনগণের বিশেষত মহিলা, শিশু ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সেবার মান উন্নয়ন করা। এর অন্যতম কৌশল ছিল স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের একীভূতকরণ এবং অত্যাবশ্যকীয় সেবা প্যাকেজ (ইএসপি)-র মাধ্যমে সেবাগ্রহীতাদের চাহিদা, সেবা সরবরাহের মান বৃদ্ধি ও ব্যবস্থাপনার মান উন্নয়ন।

    দ্বাদশ পর্যায়, (২০০৩-২০১১) স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা সেক্টর কার্যক্রম (Health, Nutrition and Population Sector Programme- HNPSP):
    এইচপিএসপিতে উপজেলা ও তদনিম্ন পর্যায়ে একীভূত কাঠামো গ্রহণের ফলে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি তার পৃথক সত্তা ও গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে। এ বাস্তবতার আলোকে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির গুরুত্ব অনুধাবন করে জানুয়ারি ২০০৪ সাল থেকে ১৯৯৮ সালের পূর্বাবস্থার মতো স্বাস্থ্য এবং পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি পৃথক সাংগঠনিক কাঠামোর মাধ্যমে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা সেক্টর কার্যক্রমের আওতায় বর্তমানে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ দুটি পৃথক সাংগঠনিক কাঠামোর আওতায় পরিচালিত হচ্ছে। এ সময় থেকে পরিবার কল্যাণ সহকারীদের দ্বারা বাড়ী পরিদর্শনের মাধ্যমে সেবাদান এবং কর্মসূচিতে পরিবার কল্যাণ রেজিস্টার পুনঃপ্রবর্তন করা হয়। স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা সেক্টর কার্যক্রমের আওতায় অগ্রাধিকারমূলক সেবাসমূহ হচ্ছে- “স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদী পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহীতার সংখ্যা বৃদ্ধি করা; নবদম্পতি, কম বয়সী ও কম সন্তানের দম্পতিদের মধ্যে পদ্ধতি গ্রহীতার সংখ্যা বৃদ্ধি করা; পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারে পুরুষের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা; নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করা; যৌনরোগ ও এইচআইভি/এইডস সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর সচেতনতা সৃষ্টি করা; কিশোর-কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা; পুষ্টিমান উন্নয়নে জনগণকে পরামর্শ প্রদান করা এবং নারীর মর্যাদা বৃদ্ধি, ক্ষমতায়ন ও নারী- পুরুষের বৈষম্যের অবসান ঘটানো”।

    ক্রয়োদশ পর্যায়, (২০১১-২০১৬) স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর উন্নয়ন কার্যক্রম (Health, Population and Nutrition Sector Development Programme- HPNSDP):
    স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নাধীন স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি উন্নয়ন কর্মসূচির (HPNSDP) গৃহীত নিম্নবর্ণিত লক্ষ্যমাত্রাসমূহ (যা’ সহস্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রা ৪ ও ৫ অর্জন অর্থাৎ শিশুমৃত্যু হ্রাস ও মাতৃ স্বাস্থ্য উন্নয়নের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ) অর্জনে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর মাঠ পর্যায়ে নতুন নতুন কর্মকৌশলের মাধ্যমে সেবা প্রদান করে আসছে। উল্লেখ্য যে এই সেক্টর কর্মসূচিতে ২০১৬ সালে নীট প্রজনন হার -১ অর্জনের লক্ষ্য স্থির করে মোট প্রজনন হার ২.০ তে নামিয়ে আনার প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে।
এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা- ৪, শিশুমৃত্যু হার হ্রাস :
সূচক ভিত্তি বছর বর্তমান অবস্থা লক্ষ্যমাত্রা ২০১৫ মন্তব্য উন্নতি/ সাফল্য
৪.১: ৫ বছরের নিচে শিশুমৃত্যু হার
(প্রতি হাজার জীবিত জন্মে)
৬৫
(বিডিএইচএস-২০০৭)
৫৩
(বিডিএইচএস-২০১১)
৪৮
৪.২: শিশুমৃত্যু হার
(প্রতি হাজার জীবিত জন্মে)
৫২
(বিডিএইচএস-২০০৭)
৪৩
(বিডিএইচএস-২০১১)
৩১
৪.৩: নবজাতকের মৃত্যু হার
(প্রতি হাজার জীবিত জন্মে)
৩৭
(বিডিএইচএস-২০০৭)
৩২
(বিডিএইচএস-২০১১)
২১

এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা- ৫, মাতৃ স্বাস্থ্যের উন্নতি :
সূচক ভিত্তি বছর বর্তমান অবস্থা লক্ষ্যমাত্রা ২০১৫ মন্তব্য উন্নতি/ সাফল্য
এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা- ৫এ : ১৯৯০-২০১৫ এর মধ্যে মাতৃমৃত্যুর হার তিন-চতুর্থাংশ হ্রাসকরণ
মাতৃমৃত্যুর হার
(প্রতি লক্ষ জীবিত জন্মে)
৩২০ ১৯৪
(বিএমএসএস-২০১০)
১৪৩
দক্ষ স্বাস্থ্য পেশাজীবির বিপরীতে প্রসব সহায়তা কারীর অনুপাত ২৮.৮
(বিডিএইচএস-২০১১)
৫০
এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা- ৫ বি : ২০১৫ সালের মধ্যে প্রজনন কালীন স্বাস্থ্যসেবার সর্বজনীন প্রবেশাধিকার অর্জন
পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারকারীর হার (সিপিআর) % ৫৬
(বিডিএইচএস-২০০৭)
৬১.২
(বিডিএইচএস-২০১১)
৭২
প্রসব পূর্ববর্তী সেবা
(কমপক্ষে ১ বার) %
২৭.৫
(১৯৯৩)
৪৭.৭
(বিডিএইচএস-২০১১)
১০০
প্রসব পূর্ববর্তী সেবা
(কমপক্ষে ৪ বার) %
৫.৫
(১৯৯৩)
২৬
(বিডিএইচএস-২০১১)
১০০
কৈশোরে মাতৃত্ব
(প্রতি হাজার জীবিত জন্মে)
১২১
(বিডিএইচএস-২০০৭)
১১৮
(বিডিএইচএস-২০১১)
১০০
পরিবার পরিকল্পনার অপূর্ণ চাহিদার হার (%) ১৭.৬
(বিডিএইচএস-২০০৭)
১৩.৫
(বিডিএইচএস-২০১১)

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম :
  • দেশের সক্ষম দম্পতিদের পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ে বিশেষ সেবাপ্রদানের লক্ষ্যে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর হতে দেশব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পরিবার পরিকল্পনা, মা ও শিশুস্বাস্থ্য সেবা ও প্রচার সপ্তাহ উদ্‌যাপন। এ সব সেবা ও প্রচার সপ্তাহ পালনের মাধ্যমে পদ্ধতি গ্রহীতাদের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব গড়ে উঠেছে এবং সেই সাথে পদ্ধতি গ্রহীতার সংখ্যাও ক্রমে বৃদ্ধি পেয়েছে।
  • ৬৪ জেলায় স্থানীয় পর্যায়ে পরিকল্পনা ( LLP) প্রণয়নের কাজ শেষ হয়েছে।
  • বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকায় যেমন: হাওড়-বাওড়, পাহাড়ী এলাকা, উপকূলীয় এলাকা এবং দুর্গম ও যেসব উপজেলায় স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদী পদ্ধতি প্রদান করার জন্য কোন মেডিক্যাল অফিসার নেই সে সমস্ত এলাকায় মেরী স্টোপস ক্লিনিক সোসাইটি-র ১০টি Roving Team-এর মাধ্যমে তাদের নিজস্ব জনবল ও যানবাহনের সাহায্যে পরিবার পরিকল্পনা সেবা প্রদানে সহায়তা করছে।
  • কেন্দ্রীয় পর্যায় হতে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত দীর্ঘদিন যাবত অনেক পদ বিশেষ করে মাঠকর্মীদের পদ শূন্য থাকায় বাড়ী বাড়ী ঘুরে সেবাদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছিল। এ অবস্থা নিরসনে ইতোমধ্যে ৪৯১০টি পদ পূরণ করা হয়েছে। যার মধ্যে ১,৫৫২টি পদ পরিবার কল্যাণ সহকারীর, ৭৫৬টি পদ পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকার, ৪১০টি উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসারদের।
  • মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে ইওসি কার্যক্রম চালুর পরিপ্রেক্ষিতে প্রতি বছর প্রায় ৫০ হাজার স্বাভাবিক ডেলিভারী এবং ১০ হাজার সিজারিয়ান অপারেশনসহ সব ধরণের মা-শিশু ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
  • সিলেট ও চট্টগ্রামসহ অন্যান্য দুর্গম এলাকায় পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর তার স্বাভাবিক কর্মসূচির পাশাপাশি বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ জন্য যমুনা চর এলাকায় ৫টি জেলার ২৮ টি উপজেলায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন সিএলপি কার্যক্রম এবং এনজেন্ডার হেলথ-এর সাথে যৌথভাবে পরিবার পরিকল্পনা সেবা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
  • মা ও শিশুস্বাস্থ্যের উন্নয়নে সারাদেশে প্রতিমাসে ৩০,০০০ (ত্রিশ হাজার) স্যাটেলাইট ক্লিনিক আয়োজন করা হচ্ছে। এছাড়া আজিমপুরস্থ এম সি এইচটিআই (MCHTI), মোহাম্মদপুর ফার্টিলিটি সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার এবং ৭০টি EOC সহ মোট ১০১টি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, ৪১৭টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে-ক্সের এমসিএইচ-এফপি ইউনিট এবং ৩৬২২টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, মা ও শিশু এবং প্রজনন স্বাস্থ্য সেবায় উল্লে-খযোগ্য অবদান রাখছে।
  • প্রায় ১৩,৯৫১টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে ১২৪৮০টি চালু হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মা, শিশুস্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবাসহ সকল ধরনের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক ও অন্যান্য প্রাথমিক স্তরের সকল সেবাকেন্দ্রে প্রসবপূর্ব সেবা (ANC), প্রসবোত্তর সেবা (PNC) প্রদানের মাধ্যমে এবং জটিল গর্ভবতী মহিলা চিহ্নিতকরণ ও প্রয়োজনে সঠিক স্থানে রেফার নিশ্চিত করার মাধ্যমে মাতৃমৃত্যু কাক্সিক্ষত পর্যায়ে হ্রাস করা হবে।
  • সিটি কর্পোরেশন ও পৌর এলাকায় বিশেষ করে বস্তি এলাকায় সক্ষম দম্পতিদের রেজিষ্ট্রেশন ও পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতির সেবা নিশ্চিত ও জোরদার করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ।
  • ধর্মীয় বাধা দূরীকরণের জন্য জাতীয়, বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মসজিদের ইমাম, মাদ্রাসার শিক্ষক ও অন্যান্য ধর্মীয় নেতাদের নিয়ে অবহিতকরণ কর্মশালার আয়োজন।
  • বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের মাধ্যমে পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক বার্তা প্রচার।
  • বাল্যবিবাহ নিরোধের জন্য দেশব্যাপী কাজীদের জন্য কর্মশালা বাস্তবায়ন।
  • কিশোর-কিশোরীদের প্রজননস্বাস্থ্য সেবা প্রদানের লক্ষ্যে সকল সেবাকেন্দ্রকে পর্যায়ক্রমে কিশোর-কিশোরীবান্ধব করা হচ্ছে এবং ৪০৪৩ জন মাঠকর্মীকে CSBA এবং ১৩৯৭ জন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকাকে ধাত্রীবিদ্যায় প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।
  • জন্মনিরোধক ইনজেকশন-এর ড্রপআউট কমিয়ে আনার জন্য পরিবার পরিকল্পনা সহকারীদের মাধ্যমে ইনজেকশনের দ্বিতীয় এবং পরবর্তী ডোজসমূহ পুশ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
  • অনাকাক্সিক্ষত গর্ভনিরোধের জন্য দেশব্যাপী ইসিপি চালু করা হয়েছে।
  • কার্যক্রমের অর্জিত সাফল্য।
  • আর্থ-সামাজিক প্রতিকূল অবস্থা যেমন: ধর্মীয় বাধা, নিরক্ষরতা, জীবনমান সম্পর্কে অসচেতনতা, দারিদ্র্য, মেয়েদের নিম্ন-মর্যাদা প্রভৃতি প্রতিকূল আর্থ-সামাজিক অবস্থার মধ্যেও বাংলাদেশের পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমের অগ্রগতি বিশ্বে প্রশংসা অর্জন করেছে।
  • ১৯৭৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রতি বছর পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহীতা শতকরা গড়ে ১.৫ হারে বৃদ্ধি।
  • জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১৯৭১- এর ৩.০% থেকে ২০১১ সালে ১.৩৭%-এ হ্রাস- (বিডিএইচএস-২০১১)।
  • পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারকারীর হার ১৯৭৫-এর ৭.৭% থেকে ২০১১ সালে ৬১.২%-এ উন্নতী- (বিডিএইচএস-২০১১)।
  • প্রজননহার বা মহিলাপ্রতি গড় সন্তান জন্মদানের হার ১৯৭১ সালের ৬.৩ থেকে ২০১১ সালে ২.৩-এ হ্রাস- (বিডিএইচএস-২০১১)।
  • এক বছরের কমবয়সী শিশুমৃত্যুর হার (প্রতি হাজার জীবিত জন্মে) ১৯৭৫-এ ১৫০ থেকে ২০০৭ সালে ৪৩ এ হ্রাস- (বিডিএইচএস-২০১১)।
  • অপূর্ণ চাহিদার হার ১৯৯৩-৯৪ সালের ১৯ শতাংশ থেকে ২০১১-এ ১৩.৫-এ হ্রাস- (বিডিএইচএস-২০১১)।
  • মাতৃমৃত্যুর হার ১৯৮২ সালের ৬.২ থেকে ২০১০ সালে ১.৯৪-এ হ্রাস- (বিএমএমএস-২০১০)।
  • প্রত্যাশিত আয়ুস্কাল ১৯৯১ সালের ৫৬.১ থেকে ২০১০ সালে ৬৭.৭-এ বৃদ্ধি- (বিবিএস-২০১০)।
বাংলাদেশের পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমের চ্যালেঞ্জসমূহ :
দীর্ঘ প্রায় চার দশকের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমে আজ অনেক সাফল্য এসেছে। তবে ২০১৬ সাল নাগাদ এইচপিএনএসডিপি-র লক্ষ্যমাত্রা এবং ২০১৫ সাল নাগাদ এমডিজি-র লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে আমাদের সামনে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে যেগুলো মোকাবেলা করতে হবে।
  • স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদী পদ্ধতি গ্রহণের হারও তুলনামূলকভাবে অনেক কম। শতকরা ৬.২ জন স্থায়ী পদ্ধতি এবং শতকরা ১.৮ জন দীর্ঘমেয়াদী পদ্ধতি গ্রহণ করছেন- (বিডিএইচএস-২০১১)।
  • পুরুষদের পদ্ধতি গ্রহণের হার এখনও অনেক কম। শতকরা ৬.২ জন পুরুষ স্থায়ী এবং অস্থায়ী পদ্ধতি গ্রহণ করছেন এর মধ্যে স্থায়ী ১.২ এবং অস্থায়ী ৫.৫- (বিডিএইচএস-২০১১)।
  • বাল্যবিবাহ বর্তমানে একটি সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশে এখনও মেয়েদের গড় বিয়ের বয়স ১৬.৪ বছর এবং এক-তৃতীয়াংশ বিবাহিতা ১৯ বছর বয়স হবার আগেই মা হয়ে যায় যা’ বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ অন্যতম হার বলে পরিগণিত। ১৫-১৯ বছর বয়সীদের মধ্যে মাত্র শতকরা ৪২.৪ ভাগ (বিডিএইচএস-২০১১) পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণ করছেন;
  • জনসংখ্যার শতকরা প্রায় ২৩ ভাগই হচ্ছে ১০-১৯ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরী। এ অল্পবয়সী জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রজননস্বাস্থ্য কার্যক্রম ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারেনি।
  • এদেশের প্রজনন হার ধনী-গরিব, শহর-গ্রাম, শিক্ষিত-অশিক্ষিতদের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য গড়ে উঠেছে। এছাড়া চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ পদ্ধতি গ্রহণের হারসহ অন্যান্য নির্দেশকেও অপর ৫টি বিভাগের তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে।
  • জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ভৌত সেবা অবকাঠামো গড়ে উঠলেও এখনও মাত্র ১৫% প্রসব এসকল কেন্দ্রে সম্পাদিত হয়।
 
G L